ইসলামের দৃষ্টিতে ভুমিকম্প কেন হয়

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের ওপর নেমে এসেছে হাজারো দুর্যোগ ও বিপর্যয়। ভূমিকম্প, ভূমিধস, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা-সুনামিসহ নানা বিপর্যয় ও দুর্যোগে বিভিন্ন সময় প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ।
অনেকে বলে থাকেন, এগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রকৃতির খেলা, প্রকৃতির আক্রোশ, মানুষের বিরুদ্ধে প্রকৃতির প্রতিশোধের বহিঃপ্রকাশ।
কিন্তু পবিত্র কোরআনে কারিম ও হাদিস থেকে বুঝে আসে এসব আল্লাহর কুদরতের উজ্জ্বল নিদর্শন। এসবের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা অপরাধীদের শাস্তি দেন। প্রিয় বান্দাদের পরীক্ষা করেন। জীবিতদের জন্য তা হয় শিক্ষা।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এ রূপই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি। তিনি শাস্তি দেন জনপদবাসীদের, যখন তারা জুলুম করে। নিশ্চয়ই তার শাস্তি যন্ত্রণাদায়ক কঠিন।’ -সূরা হুদ : ১০২
পবিত্র কোরআনে কারিমে অন্য আরেক আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, মানুষের পাপকর্মের কারণেই জলে-স্থলে দুর্যোগ ও বিপর্যয় দেখা দেয়। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণেই স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যেন তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান। যাতে তারা ফিরে আসে।’-সূরা রুম : ৪১
ইতিহাসে উল্লেখ আছে, অতীতকালে বিভিন্ন অবাধ্য জাতিকে আল্লাহতায়ালা ভূমিকম্প, ভূমিধস ও এ জাতীয় নানাবিধ শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করেছেন। এসব পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের প্রত্যেককেই আমি তার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম। তাদের কারো প্রতি আমি প্রেরণ করেছি পাথরসহ প্রচণ্ড ঝটিকা। তাদের কাউকে আঘাত করেছিল বিকট আওয়াজ, কাউকে ভূমিতে বিধ্বস্ত করেছি। কাউকে করেছি নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেননি। বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে।’ -সূরা আনকাবুত : ৪০
পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কারুনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে বিধ্বস্ত করলাম। তার পক্ষে এমন কোনো দল ছিল না, যারা তাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।’
প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের দুর্যোগ আমাদের সবার জন্য সতর্ক সংকেত। আমরা অহরহ পাপাচারে লিপ্ত থাকি। এসব পাপাচারের জন্য যেকোনো মুহূর্তে আল্লাহর শাস্তি আমাদের ধ্বংস করে দিতেই পারে। ঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা যেকোনো বিপর্যয়ে যেকোনো মুহূর্তে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারি। মাঝেমধ্যেই দুর্যোগ দিয়ে আল্লাহতায়ালা সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করে দেন। আমরা যেন নিঃশঙ্ক হয়ে নির্ভয়ে না থাকি। সদা-সর্বদা যেন সাবধান থাকি, সেটাই এসবের উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআনে কারিমের একাধিক আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে।
বস্তুত আমাদের গুনাহের কারণে ভূমিকম্প, বন্যা, ঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগ এসে থাকে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বর্ণিত হাদিস থেকে বুঝে আসে, এসব দুর্যোগ কিয়ামতের আলামতও বটে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) যখন ব্যক্তিগত সম্পদ বলে গণ্য হবে, জাকাতকে জরিমানা গণ্য করা হবে, দীনি উদ্দেশ্য ছাড়া (পার্থিব উদ্দেশ্যে) ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা হবে। মসজিদে শোরগোল হবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হবে, নিকৃষ্ট লোকেরা সমাজের নেতা হবে, অনিষ্টের আশঙ্কায় কাউকে সম্মান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান করা হবে, এ উম্মতের শেষযুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিশাপ দেবে, তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু, ভূমিকম্প, ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি, পাথর বর্ষণের আজাব এবং আরো অনেক (কিয়ামতের) আলামতের; যা একের পর এক নিপতিত হতে থাকবে। যেমন একটি পুরনো মালার সুতো ছিঁড়ে গেলে একটার পর একটা দানা পড়তে থাকে। -তিরমিজি- ২/৪৪
বলতে দ্বিধা নেই, বর্তমানে হাদিসে বর্ণিত সমুদয় পাপাচার অহরহ হচ্ছে। সুতরাং বিপর্যয়-দুর্যোগ আসাটাই এখন স্বাভাবিক। এসব দুর্যোগ আমাদের জন্য সতর্ক সংকেত। কিন্তু আমরা কি সতর্ক হই বা হবো?

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ